রবিবার ১০ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
উপালি মুখোপাধ্যায় | | Editor: শ্যামশ্রী সাহা ১০ মে ২০২৪ ০৯ : ৪৩
এক যে ছিল দুষ্টু ছেলে কারও কথা শুনত না, দাবার মতোও খেলা আছে একরত্তি জানত না...
অথচ সাদা-কালো বোর্ড আর ৬৪টি ঘুঁটি নিয়েই যে জন্মেছে সেটাও সে বুঝত না! বুঝতে কি তার বাড়ির লোকেরাই পেরেছিলেন? ছোট্ট সৌরশেখর পাড়া দাপিয়ে দৌরাত্ম্য না করলে তার দাদুই যে বুঝতেন না, নাতি জন্মেছে দাবা খেলার জন্য। এভাবেই সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে পর্দার সৌরশেখরের ‘রাজার খেলা’র সঙ্গে ভাব। সময়ের সঙ্গে সেই সখ্য আরও গাঢ়। আর প্রাণ দিয়ে কাউকে চাইলে, ভালবাসলে সেই ভালবাসা দ্বিগুণ হয়ে ফিরে আসে, এটাও প্রমাণিত সত্য। এভাবেই উত্তর কলকাতার রক থেকে এক দাবাড়ুর জন্ম। যার জীবন ক্যামেরাবন্দি করেছেন পথিকৃৎ বসু। উইন্ডোজ প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে প্রথম ‘গাঁটছড়া’ বেঁধে। নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে নারী-পুরুষ মিলিয়ে আপাতত গ্র্যান্ডমাস্টারের সংখ্যা ১০৭। বাংলায় সেই সংখ্যা ১১। আমরা গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়াকে চিনি। বিশ্বনাথ আনন্দকে নিয়ে গর্ব করি। একজন দাবাড়ু জীবনছকে কতটা সংঘর্ষ লুকিয়ে থাকে? কতটা ঘাম, রক্ত, চোখের জল ঝরানোর পর ‘কিস্তিমাত’ করেন তিনি? তারই দলিল সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনীছবি ‘দাবাড়ু’। এই ছবি দিয়ে আরও এক অনন্য নজির গড়লেন নন্দিতা-শিবপ্রসাদ। দেশের মধ্যে এই প্রথম কোনও গ্র্যান্ডমাস্টারের জীবন পর্দায় ফুটে উঠল। তাও আবার এক বাঙালির।
এটা ছবি সম্পর্কে গৌরচন্দ্রিকা। এবার প্রশ্ন কেমন হয়েছে ছবি? ছবির গল্পই বা কেমন?
ছবি শুরু হয়েছে এক দাদুর থেকে। যিনি প্রায় প্রতি সকালে বাড়ির কোনও না কোনও পুরনো জিনিস নিয়ে হাজির পুরনো জিনিস কেনাবেচার দোকানে। বিক্রি করে টাকা পেলে হার্টের ওষুধ ক’টা কিনতে পারেন। তারপরেই টিপিক্যাল উত্তর কলকাতার অলি, গলি, তস্য গলির মধ্যে সেঁধিয়ে থাকা, নোনা ধরা দোতলা এক বাড়ির দালান। বারো ঘর এক উঠোনের সেই এজমালি বাড়ির এক বাসিন্দা সৌরশেখর, তার মা-বাবা, দাদু। বাবা কোনও এক কালের জ্যোতিষী। মিথ্যে বলতে পারেন না। তাই তাঁর পসার নেই। তাই অবসরের সঙ্গী নেশা। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে মায়ের একমাত্র অক্সিজেন তার দামাল ছেলে। দাদুর লাঠিও সে-ই। সেই ছেলের ভিতর ঘুমিয়ে থাকা দাবাড়ু জেগে উঠল দাদুর ছোঁয়ায়। যদিও তাঁকে মদ্যপ জামাইয়ের থেকে শুনতে হয়েছিল, তাস-পাশার মতোই দাবা খেলাও নাকি জুয়ার এক রূপ! যা তিনি নাতির মধ্যে বুনে দিতে চাইছেন। এভাবেই নিত্য অভাব, পাওনাদারদের অপমান, অক্লান্ত পরিশ্রম, আধপেটা খেয়ে না খেয়ে থেকে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখা, একরত্তি বয়েস থেকে খেলার উপার্জনে সংসার চালানো— দেখিয়ে দিয়েছে কতটা সাধনা থাকলে সিদ্ধিলাভ সম্ভব।
অভিনয় কথা...
১. এ ছবির সম্পদ প্রত্যেকে। তাঁদের মতো করে। পোস্ত থেকে দাবাড়ুতে অর্ঘ বসু রায়ের উত্তরণ চোখে লেগে থাকবে। কখনও তার প্রেমিক সত্ত্বা কেবল নিজের স্বপ্নপূরণের জেদে প্রথম প্রেমকে দূরে ঠেলেছে। কখনও আপাত লাজুক, নম্র ছেলেটি ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতে মাকে মুখের উপরে বলেছে, ‘‘আমি খেলেছি, জিতেছি, টাকা এনেছি, মেডেল এনেছি। তাই আমার ইচ্ছে-অনিচ্ছের উপর কথা বলার অধিকার শুধুমাত্র আমার।’’ কিংবা অতি অভদ্র, নিজের আত্মমর্যাদা এবং পদমর্যাদায় অভিমানি, স্বৈরাচারি প্রশিক্ষকের অভদ্রতা, অত্যাচারে জর্জরিত হতে হতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এক দাবাড়ু ফুঁসে উঠেছে, ‘‘স্যর, আমিও প্রমাণ করে দেব, এই উত্তর কলকাতার রক থেকেই গ্র্যান্ডমাস্টারের জন্ম হয়।’’ অতি শান্ত, শিষ্টরা বারংবার অপমানিত হতে হতে এভাবেই একদিন প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। শুধু পর্দায় নয়, বাস্তবেও।
২. একরত্তি সমদর্শী সরকার। চিরতার মতো তেতো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে একটুকরো মিছরি! মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া সমদর্শী বুঝে বা না বুঝে পর্দায় কী ভাল ছোট্ট সৌরশেখর! বিশেষ করে ধারাবাহিক ‘মহাভারত’ দেখবে বলে তড়িঘড়ি খেলায় জিতে টিভির সামনে বসে পড়া।
৩. না সেজে, শুধু লম্বা বেণি বেঁধে, কপালে সিঁদুর সিঁদুর টিপ... তুমি এতে আজও মহারানি, তুমি এতেই সুপারহিট। ছবিতে এটাই সৌরশেখরের লড়াকু মা, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। নেপথ্য গল্প অনুযায়ী, দৃশ্য জীবন্ত করতে গিয়ে অজান্তে কড়াইয়ের ফুটন্ত খিচুড়ি তাঁর মুখেচোখে ছিটকে লেগেছে। সেই দৃশ্যে তিনি যতটা জীবন্ত ততটাই স্বামীর সঙ্গে ডালভাতের অভাবি দাম্পত্যে। ছেলের জন্য নিজেকে নিংড়ে দেওয়া মাতৃসত্ত্বায়।
৪. ছোট্ট চরিত্রেও অনবদ্য শঙ্কর চক্রবর্তী, বিশ্বনাথ বসু, সঙ্ঘশ্রী সিনহা মিত্র। ব্যর্থ বাবার প্রতি মুহূর্তে হেরে যাওয়া আজও রয়েছে। যেমন রয়েছে, উত্তর কলকাতার খুব চেনা পড়শিরা। যাঁরা খাবার ভর্তি বাটি চালাচালিও করেন। আবার কূটকচালিও।
৫. চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, কৌশিক সেন। পর্দায় দ্বিতীয় তারকা অভিনেতা অসভ্যতা দেখে আপনিও বিড়বিড়িয়ে কটু কথা না বলে পারবেন না! চরিত্রের খাতিরে কৌশিক ছবিতে এতটাই অসভ্য, অভদ্র। ঠিক উল্টো বর্ষীয়ান অভিনেতা চিরঞ্জিত। যাঁর স্নেহ না থাকলে এমন দাবাড়ুর জন্ম হয়? স্ত্রীর মৃত্যুও তুচ্ছ সন্তানসম ছাত্রের প্রতিষোগিতায় অংশ নেওয়ার কারণে! এবং এই ছবির তিনিই রাজনৈতিকমনস্কতা, ‘‘বিদেশে যখন খেলোয়াড় তৈরি হয়, তখন রাষ্ট্র তার পাশে দাঁড়ায়। আর এদেশে খেলোয়াড় তৈরি হয়ে যাওয়ায় পর তখন তার পাশে দাঁড়ায়...’’। সত্যিই এক কালে এই ধরনের প্রশিক্ষক ছিলেন। আজও কি তাঁরা আছেন?
৬. সব্বাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন দীপঙ্কর দে। বহু যুগ পরে নন্দিতা-শিবু সুযোগ দিতেই তিনি হাত খুলে খেলেছেন। তাঁর অভিনয়ই এই ছবির সাফল্যের অন্যতম হাতিয়ার। দীপঙ্কর ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। কখনও সশরীরে কখনও অ-শরীরে। জীবন থেকে ছুটি পেয়েও নাতিকে ছাড়তে পারেননি। তিনি না থাকলে সৌরশেখর কোথায়? ভাগ্যিস তিনি ছিলেন। নইলে এত বড় ভাবনার বড় অংশ একার ঘাড়ে কে এভাবে বইতেন? তাঁর একটি সংলাপ, ‘‘বড় প্লেয়ারের আসল পরীক্ষা জিতে আসা নয়। ফিরে আসাও হয়’’... ভাইরাল। ফতুয়া, গরদের ধুতিতে, এলোমেলো চুল, মোটা ফ্রেমের চশমায়, কপালে জমে থাকা অভাবের ঘামে, জীবনের কাছে হেরে গিয়েও হার না মানা জেদে, নাতির মধ্যে নিজের দেখা স্বপ্ন বুনে দেওয়ার মাধ্যমে দীপঙ্কর দে মারাত্মক ভাবে খেলায় ফিরে এসেছেন! আবারও...
লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট...
এ ছবির ভিত্তি টানটান স্পোর্টস ড্রামা। তাই গান বোড়ে। গল্প আর অভিনয় রাজা-রানি। পথিকৃৎ প্রথম ছবিতেই নন্দিতা-শিবুর ঘরানা বুঝে নিয়েছেন। তারিফের দাবিদার চিত্রনাট্যকার অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়, কাহিনিকার অর্পণ গুপ্তও। ছবিমুক্তির আগে এক সাক্ষাৎকারে শিবু জানিয়েছিলেন, তাঁদের লক্ষ্য, উইন্ডোজের ছবি মানেই নতুন চমক, নতুন গল্প, নতুন বার্তা। যাতে ছবি দেখতে বসে দর্শক যেন একঘেয়েমিতে না ভোগেন। সেই পথে হেঁটে, নাটকীয়তা (নিন্দুকদের দাবি অতিনাটকীয়তা), চোখের জল, কমেডি, নির্মম বাস্তবের টুকরো ঝলকই তো থাকবে! নইলে ছবি দেখতে বসে দর্শক নিজের জীবনের সঙ্গে তাকে মেলাবেন কী করে? এই ছবিতেও সে সব নিক্তি মেপে আছে। আর আছে জোরালো বার্তা। শুধু ছোটরা নয়, মা-বাবা, পড়শি, প্রশিক্ষক— প্রত্যেকে এই ছবি থেকে কিছু না কিছু শিখবেন। যেমন, সর্বংসহা, আপাতকঠিন মা না হলে সন্তান লক্ষ্যে পৌঁছোয় না। কিংবা সন্তানের ইচ্ছে মানলে আখেরে তার উন্নতি। এই প্রজন্ম শিখবে, সামাজিক মাধ্যমে মুখ গুঁজে থাকলে জীবন ষোল আনা বৃথা। শিক্ষাগুরুরাও ঝালিয়ে নেবেন, শাসন তাকেই মানায় সোহাগ করে যে...!
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘‘থিয়েটার থাক... ওতে লোকশিক্ষে হবে।’’ ভাগ্যিস নন্দিতা-শিবু বুঝেছিলেন, সিনেমাতেও সেটা সম্ভব। সরকার কি এবার দাবাখেলাকে ‘জাতীয় খেলা’র মর্যাদা দেবে?
বিশেষ খবর
নানান খবর
নানান খবর
'ভুল ভুলাইয়া ৩'তে কীভাবে একসঙ্গে মাধুরী-বিদ্যাকে হাজির করালেন? গোপন পদ্ধতি ফাঁস পরিচালকের!...
'কেউ যদি মেয়ের ক্ষতি করে, নির্দ্বিধায় খুন করে ফেলব', একরত্তি লারাকে নিয়ে কেন এমন বললেন বরুণ?...
এক তিরে 'একলব্য'কেই ঘায়েল 'রাঙামতি'র! কী চলছে শুটিং ফ্লোরে?...
বাংলা ছবি থেকে ঋতুপর্ণা, মিষ্টি দই ছুঁয়ে শরীরচর্চা, কলকাতায় এসে আর কী বললেন সোহা?...
'অ্যানিম্যাল পার্ক' করছেন রণবীর! কবে থেকে শুরু শুটিং? আভাস দিলেন প্রযোজক ভূষণ কুমার ...
হাতে কাঁচা টাকা, বলিউডে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরেই মাদকের নেশায় ডুব? কী বললেন প্রতীক বব্বর?...
'সিম্বা' হাজির হচ্ছে 'গোলমাল ৫'-এ? এই সিরিজের সঙ্গে এবার 'কপ-ইউনিভার্স'কে মেলাবেন রোহিত?...
রান্নায় দারুণ পটু 'টুকাইবাবু'! নিজের হাতে কোন পদ রেঁধে খাওয়ান প্রিয়জনকে? কী জানালেন ঋত্বিক?...
হার্দিককে ভুলতে পারছেন না! বিচ্ছেদের কয়েক মাস পর কোন ইঙ্গিত দিলেন নাতাশা? ...
অভিনয়ে একঘেঁয়েমি, বিতৃষ্ণায় বলিউড ছাড়তে চেয়েছিলেন মনীষা! ডিম্পলের কোন পরামর্শে বদলে যায় তাঁর চিন্তা?...
'ভুল ভুলাইয়া ৩'র সঙ্গে একই দিনে 'সিংহম এগেইন'-এর মুক্তি, ইচ্ছে করেই একাজ করেছেন অজয়?...
'সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার্স নেই, তাই রিজেক্ট হয়েছি অনেকবার'-দেবদত্ত রাহা...
‘দিওয়ার’-এ গুন্ডাদের পেটানোর আগে ১০বার দৌড়েছিলেন অমিতাভ! কিন্তু কেন? প্রায় ৫০ বছর পর গোপন কথা ফাঁস ...
ভাদুড়ী মশাইয়ের কাঞ্চন–লাভ
আমিরের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরেই বদলেছে পছন্দ? কিরণ রাওয়ের প্রিয় খান কে জানেন? ...
শালিনী পাসির বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র তৈরির জন্য কী শর্ত দিয়েছিলেন চিত্রশিল্পী এম এফ হুসেইন! জানলে চোখ কপালে উঠবে...
সলমন খানের আবাসনে এসে ‘টাইগার’-এর সঙ্গে কী করতেন ঐশ্বর্যা? বিস্ফোরক সোমি আলি! ...
বিশেষ বন্ধু ওয়াকার ব্ল্যাঙ্কোর পাশাপাশি ‘কিল’ ছবির নায়কের সঙ্গে ‘সম্পর্কে’ অনন্যা! ফাঁস করলেন কে? ...
রক্তমাখা হাত, কপালে রক্তচন্দন, চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে জল!কী হয়েছে ‘বাহুবলী’ নায়িকা অনুষ্কার? ...